অন্ধকারে ফজরের নামায শুরু করে অন্ধকারেই শেষ করা কি উত্তম ?

প্রশ্নঃ

আসসালামু আলাইকুম। মুফতী সাহেবের কাছে জানতে চাই অন্ধকারে ফজরের নামায শুরু করে অন্ধকারেই শেষ করা কি উত্তম ?

উত্তরঃ

وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ

খুব অন্ধকারে ফজরের নামায শুরু করে অন্ধকারেই শেষ করতে হবে। মর্মে কোন নির্দেশ পাওয়া যায় না। মূলত দল-বিচ্ছিন্ন বর্ণনা এবং ফেয়েলী হাদীস পাওয়া যায়। রসূলুল্লাহ (ﷺ) উম্মতকে ভোরের অন্ধকার ফর্সা করে ফজর আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আবার নিজেও ফর্সা করে ফজর আদায় করেছেন। কিন্তু অন্ধকারে ফজর শুরু করে শেষ করা সম্পর্কে তার কর্মের সন্ধান পাওয়া যায় কিন্তু নির্দেশ পাওয়া যায় না। সুতরাং ফর্সা করে ফজর আদায় করা যে, উত্তম তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। নিম্নের শায বর্ণনাটি লক্ষণীয়-

صَلَّى الصُّبْحَ مَرَّةً بِغَلَسٍ ثُمَّ صَلَّى مَرَّةً أُخْرَى فَأَسْفَرَ بِهَا ثُمَّ كَانَتْ صَلَاتُهُ بَعْدَ ذَلِكَ التَّغْلِيسَ حَتَّى مَاتَ وَلَمْ يَعُدْ إِلَى أَنْ يُسْفِرَ ‏.‏

১.অর্থ: রাসূল (ﷺ) একবার ফজরের নামায অন্ধকারে আদায় করেন। অতঃপর একবার ভোরের আলো ফর্সা করে আদায় করেন। পরবর্তীতে তিনি মৃত্যু পর্যন্ত ফজরের নামায অন্ধকারে পড়েন। পরে তিনি আর ফর্সা করে পড়েননি। (সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৩৯৪ হাদীসের মান: শায)

ব্যাখ্যা: আলোচ্য হাদীসটি একটি বড় হাদীসের অংশ এবং তা উসামা ইবনে যায়েদ আল-লাইসীর শায বা দল-বিচ্ছিন্ন বর্ণনা। আর হাদীস সহীহ হওয়ার পথে দল বিচ্ছিন্নতা একটি বড় বাধা। তাই এই অংশটুকুকে ইমাম আবু দাউদ (রহ.) দোষযুক্ত সাব্যস্ত করেছেন।কাজেই অন্ধকারে ফজর পড়ার পক্ষে দলিল হিসাবে এই হাদীসটিকে উপস্থাপন করা সঠিক নয়। (সুনানে আবু দাউদের ৩৯৪ নং হাদীসের আলোচনা দ্র: )

عَنْ رَافِعِ بْنِ خَدِيجٍ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ” أَسْفِرُوا بِالْفَجْرِ فَإِنَّهُ أَعْظَمُ لِلأَجْرِ ”
২.অর্থ: রাফে ইবনে খাদীজ (রা.) থেকে বর্ণিত:
তিনি বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, তোমরা ফজরের নামায (ভোরের অন্ধকার) ফর্সা করে আদায় করো। কেননা তাতে অনেক সওয়াব রয়েছে। (সুনানে তিরমিযী হাদীস নং ১৫৪ সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৪২৪ হাদীসের মান: সহীহ )

ব্যাখ্যা: ইমাম তিরমিযী (রহ.) উক্ত হাদীস বর্ণনা করে বলেন, রাসূল (ﷺ) এর সাহাবীগণের মধ্য হতে এবং তাবেঈগণের মধ্য হতে একাধিক বিশেষজ্ঞ সাহাবী ও তাবেঈ ফজরকে ফর্সা করে আদায় করার মত দিয়েছেন। সুফইয়ান সাওরীও এই মত গ্রহণ করেছেন। (সুনানে তিরমিযীর ১৫৪ নং হাদীসের আলোচনা দ্র:)

ইমাম তিরমিযীর উক্ত বক্তব্য অনুযায়ী বহু সংখ্যক সাহাবী ও তাবেঈ ফর্সা করে ফজর পড়ার প্রবক্তা ছিলেন। সুতরাং যারা বলেন, ফর্সা করে ফজর পড়া জাল হাদীসের ভিত্তিতে এবং সহীহ হাদীসের অপব্যাখ্যা করে পড়া হয়। তাহলে ঐ সকল সাহাবী ও তাবেঈগণও কি জাল হাদীস অনুযায়ী আমল করতেন ? তারাও কি সহীহ হাদীসের অপব্যাখ্যা করে ফজর পড়তেন ?

عَنْ رَافِعِ بْنِ خَدِيجٍ أَصْبِحُوْا بِالصُّبْحِ فَإِنَّكُمْ كُلَّمَا أَصْبَحْتُمْ بِالصُّبْحِ كَانَ أَعْظَمَ لِأُجُوْرِكُمْ

৩.অর্থ: রাফে ইবনে খাদীজ (রা.) বলেন, রসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা ফজরের নামাযকে আলোকিত করে আদায় করো। কেননা তোমরা ফজরের নামাযকে যত বেশি আলোকিত করে আদায় করবে ততই তা তোমাদের সওয়াব বৃদ্ধির কারণ হবে। (সহীহ ইবনে হিববান হাদীস নং ১৪৮৯ হাদীসের মান: সহীহ)

عَنْ مَحْمُودِ بْنِ لَبِيدٍ، عَنْ رِجَالٍ، مِنْ قَوْمِهِ مِنَ الأَنْصَارِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” مَا أَسْفَرْتُمْ بِالْفَجْرِ فَإِنَّهُ أَعْظَمُ بِالأَجْرِ ”

৪.অর্থ: মাহমুদ ইবনে লাবীদ (রহ.) এর মাধ্যমে তাঁর আনসার সম্প্রদায়ের কতিপয় ব্যক্তি হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,ফজরের নামায যতই ফর্সা হওয়ার পর আদায় করবে, ততই তোমাদের অধিক সওয়াবের কারণ হবে। (সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ৫৪৯ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৬৭২ হাদীসের মান: সহীহ )

মোদ্দাকথা রমযান মাস ব্যতীত ফজরের নামায সর্বদা ফর্সা করে পড়া উত্তম৷ যারা বলে অন্ধকারে ফজরের নামায শুরু করে অন্ধকারে শেষ করা উত্তম তাদের কথা যথার্থ নয়৷ কেননা তারা যেই হাদীসগুলো দিয়ে দলিল পেশ করে তা হচ্ছে ফেয়েলী হাদীস। আর ফর্সা করে ফজর আদায় করার হাদীসগুলো হলো কওলী হাদীস। আমরা জানি ফেয়েলী এবং কওলী হাদীসের মধ্যে যখন বিরোধ হয় তখন কওলী হাদীস প্রাধান্য পায়। সুতরাং ফজরের নামায ফর্সা করে পড়াই উত্তম হবে। এ ছাড়াও অন্ধকারে ফজরের নামায শুরু করা অধিক সওয়াব থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণ এবং নবীজীর নির্দেশ অমান্য হয়। আর ফর্সা করে ফজর পড়লে আরেকটা বিশেষ উপকার অধিক মানুষ জামাতে শরীক হতে পারে। তাই উম্মতের সুবিধার কথা বিবেচনা করে হলেও ফর্সা করে ফজর পড়াই অধিক যুক্তি যুক্ত।

وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- মো. শফিকুল ইসলাম।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।

Share This Post

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *