প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম। আমার অন্ধকারে নামায পড়তে ভালো লাগে। এতে করে আমার নামাযে মনোযোগ বাড়ে। শরীয়তের দৃষ্টিতে এভাবে নামায পড়া কি ঠিক ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَدْ
মুসলমানদের মধ্যে এমন অনেক ব্যক্তিই আছেন যারা অন্ধকারে নামায পড়তে পছন্দ করেন। বিশেষ করে তারাবী, তাহাজ্জুদ ও রাতের নফল নামায। অনেকেই মনে করেন অন্ধকার অবস্থায় নামায পড়লে নামায মাকরূহ হবে! আসলে তাদের এই ধারণা সঠিক নয়। ইসলামী শরীয়তে এমন কোন বিধি-নিষেধ আসেনি। কেউ চাইলে অন্ধকারেও নামায আদায় করতে পারেন, আবার লাইট জ্বালিয়েও নামায আদায় করতে পারেন। এতে কোনো অসুবিধা নেই। নামাযে সিজদার জায়গার দিকে নজর রাখা সুন্নত। কিন্তু তার জন্য ঐ জায়গা দেখতে পাওয়া বা দেখতে থাকা জরুরী নয়। রাসূল (সা.) রাতের অন্ধকারে তাহাজ্জুদ নামায আদায় করেছেন এই মর্মে একাধিক সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
عَنْ عَائِشَةَ زَوْجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهَا قَالَتْ كُنْتُ أَنَامُ بَيْنَ يَدَيْ رَسُولِ اللهِ وَرِجْلَايَ فِي قِبْلَتِهِ فَإِذَا سَجَدَ غَمَزَنِي فَقَبَضْتُ رِجْلَيَّ فَإِذَا قَامَ بَسَطْتُهُمَا قَالَتْ وَالْبُيُوتُ يَوْمَئِذٍ لَيْسَ فِيهَا مَصَابِيحُ
১.অর্থ: আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সা.) এর সামনে ঘুমাতাম, আমার পা দু খানা তাঁর কিবলার দিকে ছিল। তিনি সিজদায় গেলে আমার পায়ে মৃদু চাপ দিতেন, তখন আমি পা দু খানা গুটিয়ে নিতাম। আর তিনি দাঁড়িয়ে গেলে আমি পা দু খানা প্রসারিত করতাম। সে সময় আমাদের ঘরে কোন বাতি ছিল না। (ইফা. সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৮৯,সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১০২৮, হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ عَائِشَةَ، رضى الله عنها قَالَتْ فَقَدْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم ذَاتَ لَيْلَةٍ فَجَعَلْتُ أَطْلُبُهُ بِيَدِي فَوَقَعَتْ يَدِي عَلَى قَدَمَيْهِ وَهُمَا مَنْصُوبَتَانِ وَهُوَ سَاجِدٌ يَقُولُ
২.অর্থ: আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এক রাতে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিছানায় না পেয়ে (অন্ধকারে) খুঁজতে লাগলাম। হঠাৎ করে আমার হাত তাঁর পায়ের তালুতে গিয়ে লাগল। তিনি সিজদারত ছিলেন এবং তার পা দু’টো দাঁড় করানো ছিল। (ইফা. সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৯৭৪ সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং ১৬৯,উভয় হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ عَمَّتِهِ أُمِّ حُمَيْدٍ – امْرَأَةِ أَبِي حُمَيْدٍ السَّاعِدِيِّ – أَنَّهَا جَاءَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنِّي أُحِبُّ الصَّلَاةَ مَعَكَ. قَالَ : ” قَدْ عَلِمْتُ أَنَّكِ تُحِبِّينَ الصَّلَاةَ مَعِي، وَصَلَاتُكِ فِي بَيْتِكِ خَيْرٌ لَكِ مِنْ صَلَاتِكِ فِي حُجْرَتِكِ، وَصَلَاتُكِ فِي حُجْرَتِكِ خَيْرٌ مِنْ صَلَاتِكِ فِي دَارِكِ، وَصَلَاتُكِ فِي دَارِكِ خَيْرٌ لَكِ مِنْ صَلَاتِكِ فِي مَسْجِدِ قَوْمِكِ، وَصَلَاتُكِ فِي مَسْجِدِ قَوْمِكِ خَيْرٌ لَكِ مِنْ صَلَاتِكِ فِي مَسْجِدِي “. قَالَ : فَأَمَرَتْ، فَبُنِيَ لَهَا مَسْجِدٌ فِي أَقْصَى شَيْءٍ مِنْ بَيْتِهَا وَأَظْلَمِهِ، فَكَانَتْ تُصَلِّي فِيهِ، حَتَّى لَقِيَتِ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ.
৩.অর্থ: আব্দুল্লাহ ইবনে সুয়াইদ আল আনসারী (রা.) তার চাচা থেকে বর্ণনা করেন যে, আবু হুমাইদ আস সায়িদী এর স্ত্রী রাসূল (সা.) এর কাছে এসে বললেন হে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয় আমি আপনার সাথে নামায পড়তে পছন্দ করি। তখন নবীজী (সা.) বললেন, আমি জেনেছি যে, তুমি আমার সাথে নামায পড়তে পছন্দ কর। অথচ তোমার জন্য একান্ত রুমে নামায পড়া উত্তম তোমার বসবাসের ঘরে নামায পড়ার চেয়ে। আর তোমার বসবাসের ঘরে নামায পড়া উত্তম তোমার বাড়িতে নামায পড়ার চেয়ে। আর তোমার বাড়িতে নামায পড়া উত্তম তোমার এলাকার মসজিদে নামায পড়ার চেয়ে। আর তোমার এলাকার মসজিদে নামায পড়া উত্তম আমার মসজিদে (মসজিদে নববীতে) নামায পড়ার চেয়ে। তারপর তিনি আদেশ দিলেন তার বাড়ির কোণে একটি রুম বানাতে। আর সেটিকে অন্ধকারচ্ছন্ন করে ফেললেন। তারপর সেখানেই তিনি নামায পড়তেন মৃত্যু পর্যন্ত। (মুসনাদে আহমাদ হাদীস নং ২৭০৯০ হাদীসের মান: হাসান)
মোটকথা অন্ধকারে নামায আদায় করা যায় এতে কোন সমস্যা নেই। কেননা একাধিক সহীহ হাদীসের দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্ধকারে নামায আদায় করেছেন। সুতরাং অন্ধকারে নামায আদায় করা মাকরূহ বা নাজায়েয হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- মুহাম্মদ ইদরীস।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply