প্রশ্নঃ
আসসালামু আলাইকুম! প্রচণ্ড শীতে ফরয গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করা যাবে কি ?
উত্তরঃ
وَعَلَيْكُمُ السَّلاَمْ وَ رَحْمَةُ اللّٰهِ وَ بَرَكَاتُهْ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
حَامِدًا وَّمُصَلِّيََا وَّمُسَلِّمًا أمّٰا بَعَد
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবন বিধান। মানুষের অবস্থার আলোকে শরয়ী বিধানগুলোকে সহজ-সরল করে পেশ করা হয়েছে। এ জন্য অতিরিক্ত শীতে ফরয গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করা জায়েয আছে। তবে শর্ত হচ্ছে গোসল করলে যদি অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা প্রবল হয় এবং গরম পানির ব্যবস্থা না থাকে। অথবা রোগ বৃদ্ধি বা জীবন নাশের আশঙ্কা থাকে। কিংবা সুস্থ হতে বিলম্ব হয় তাহলে তায়াম্মুম করতে কোন বাঁধা নিষেধ নেই। আর ওজরের কারণে তায়াম্মুম করার পর যখন গোসল করার সামর্থ্য ফিরে পাবে তখন গোসল করে নিতে হবে।
وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ جُنُبًا فَاطَّہَّرُوۡا ؕ وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ مَّرۡضٰۤی اَوۡ عَلٰی سَفَرٍ اَوۡ جَآءَ اَحَدٌ مِّنۡکُمۡ مِّنَ الۡغَآئِطِ اَوۡ لٰمَسۡتُمُ النِّسَآءَ فَلَمۡ تَجِدُوۡا مَآءً فَتَیَمَّمُوۡا صَعِیۡدًا طَیِّبًا فَامۡسَحُوۡا بِوُجُوۡہِکُمۡ وَ اَیۡدِیۡکُمۡ مِّنۡہُ ؕ مَا یُرِیۡدُ اللّٰہُ لِیَجۡعَلَ عَلَیۡکُمۡ مِّنۡ حَرَجٍ وَّ لٰکِنۡ یُّرِیۡدُ لِیُطَہِّرَکُمۡ
১.অর্থ: আর যদি তোমরা অসুস্থ হও বা সফরে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রস্রাব-পায়খানা সেরে আসে কিংবা তোমরা স্ত্রী সহবাস করে থাক, অতঃপর পানি না পাও তাহলে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও। অর্থাৎ তোমাদের মুখমন্ডল ও উভয় হাত মাটি দ্বারা মাসাহ করো। আল্লাহ তোমাদের উপর কোন সমস্যা সৃষ্টি করতে চান না, বরং তিনি তোমাদের পবিত্র করতে চান। (সূরা মায়েদা আয়াত নং ৬)
عَنْ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ، قَالَ احْتَلَمْتُ فِي لَيْلَةٍ بَارِدَةٍ فِي غَزْوَةِ ذَاتِ السَّلاَسِلِ فَأَشْفَقْتُ إِنِ اغْتَسَلْتُ أَنْ أَهْلِكَ فَتَيَمَّمْتُ ثُمَّ صَلَّيْتُ بِأَصْحَابِي الصُّبْحَ فَذَكَرُوا ذَلِكَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ” يَا عَمْرُو صَلَّيْتَ بِأَصْحَابِكَ وَأَنْتَ جُنُبٌ ” . فَأَخْبَرْتُهُ بِالَّذِي مَنَعَنِي مِنَ الاِغْتِسَالِ وَقُلْتُ إِنِّي سَمِعْتُ اللَّهَ يَقُولُ ( وَلاَ تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا ) فَضَحِكَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَلَمْ يَقُلْ شَيْئًا
২.অর্থ: আমর ইবনে আস (রা.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, যাতুস সালাসিল যুদ্ধের সময় খুব শীতের রাতে আমার স্বপ্নদোষ হয়। আমার ভয় হলো, আমি যদি এই সময় গোসল করি তাহলে ক্ষতিগ্রস্থ হবো। তাই আমি তায়াম্মুম করে আমার সাথীদের সাথে ফজরের নামায আদায় করি। পরে তারা বিষয়টি রাসূল (ﷺ) কে জানালো। রাসূল (ﷺ) বললেন, হে আমর! তুমি নাকি নাপাক অবস্থায় তোমার সাথীদের সঙ্গে নামায আদায় করেছ! তখন আমি গোসল না করার কারণ সম্পর্কে তাকে অবহিত করলাম এবং বললাম, আমি আল্লাহর এই বাণীও শুনেছিঃ ‘‘তোমরা নিজেরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি বড়ই দয়াবান’’( সূরা নিসা আয়াত নং ২৯)। একথা শুনে রাসূল (ﷺ) হেসে দিলেন এবং কিছুই বললেন না। (ইফা. সুনানে আবু দাউদ হাদীস নং ৩৩৪ হাদীসের মান: সহীহ)
عَنْ أَبِي ذَرٍّ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” إِنَّ الصَّعِيدَ الطَّيِّبَ طَهُورُ الْمُسْلِمِ وَإِنْ لَمْ يَجِدِ الْمَاءَ عَشْرَ سِنِينَ فَإِذَا وَجَدَ الْمَاءَ فَلْيُمِسَّهُ بَشَرَتَهُ فَإِنَّ ذَلِكَ خَيْرٌ ”
৩.অর্থ: আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, দশ বছর ধরেও যদি পানি না পায় তা হলেও পাক মাটি একজন মুসলিমের জন্য পবিত্রতার উপকরণ বলে বিবেচ্য হবে। অতঃপর যখন সে পানি পাবে তখন তা দিয়ে সে তার শরীর ধুয়ে নিবে। এটাই তার জন্য উত্তম। (ইফা. সুনানে তিরমিযী হাদীস নং১২৪ সুনানে নাসাঈ হাদীস নং ৩২৩ হাদীসের মান: সহীহ)
মূল কথা হলো অতিরিক্ত শীত হলেই স্বাভাবিক অবস্থায় তায়াম্মুম করা জায়েয নেই। তবে কিছু শর্ত সাপেক্ষে জায়েয। সেই শর্তগুলো হলো অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা প্রবল হলে ও গরম পানির ব্যবস্থা না থাকলে অথবা রোগ বৃদ্ধি বা জীবন নাশের আশঙ্কা থাকলে। কিংবা সুস্থ হতে বিলম্ব হলে। তাহলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে গোসল না করে তায়াম্মুম করে নিতে পারবে।
وَاللّٰهُ أعْلَمُ باِلصَّوَاب
উত্তর প্রদানে- মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।
শিক্ষার্থী: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
উত্তর নিরীক্ষণে: শাইখ রায়হান জামিল।
পরিচালক: মানহাল ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার।
Leave a Reply